সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট বা ইমেইল একাউন্ট হ্যাকড হওয়ার ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই টাইমলাইনে দেখি। একাউন্ট হ্যাকড হওয়ার কিছু সাধারণ কারণ আছে।
১। অনেকে সহজে অনুমেয় এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন (যেমনঃ নিজের বা কাছের কারো ফোন নম্বর, জন্মতারিখ, জেলা বা থানার নাম, গ্রামের নাম, পছন্দের মুভির নাম, বইয়ের নাম, লেখকের নাম ইত্যাদি)। এরকম পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলেও এর সাথে নম্বর বা/এবং বিভিন্ন সিম্বল জুড়ে দিতে হবে। পাসওয়ার্ডে অক্ষর, নম্বর এবং বিভিন্ন সাইন ব্যবহার করলে হ্যাকারদের পাসওয়ার্ড অনুমান করা কঠিন হয়।
২। পাসওয়ার্ডে ন্যুনতম ৮ অক্ষর ব্যবহার করতে হবে। পাসওয়ার্ড অপেক্ষাকৃত বড় হলে অধিকতর নিরাপদও হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখার বিষয় আসে। এজন্যে একটা প্যাটার্ন ব্যবহার করতে হবে যেন আপনি ভুলে না যান। প্রয়োজনে, পাসওয়ার্ড মনে থাকে এরকম কিছু হিন্ট নিরাপদ কোথাও লিখে রাখতে পারেন।
৩। অনেকে ইমেইল এবং অন্যান্য একাউন্টে অভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে। এটা করা একদমই ঠিক না। আপনার ইমেইল হলো আপনার অনলাইন রক্ষাকবচ। কোনো কারণে পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে ইমেইলের মাধ্যমে পাসওয়ার্ড রিসেট করতে হয়। আর, আপনি যদি ইমেইল এবং অন্যান্য একাউন্টে (যেমনঃ ফেসবুক, জুম ইত্যাদি) একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার যেকোনো একাউন্ট হ্যাক করে বাকিগুলোও হাতিয়ে নেওয়া সম্বব। তাই, ইমেইল একাউন্টে সবচেয়ে কঠিন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন এবং অন্যান্য একাউন্টে ভিন্নভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
৪। হ্যাকিংয়ের ঘটনা মূলত ঘটে রিকভারি ইমেইলের মাধ্যমে। আপনার ইমেইল আইডি যখন খোলা হয়েছে তখন হয়তো আপনার প্রযুক্তি জ্ঞান খুব কম ছিল, কিংবা কোনো বন্ধু আপনার ইমেইল আইডি খুলে দিয়েছিল। তখন তার ইমেইল আইডি হয়তো রিকভারি ইমেইল বা সেকেন্ডারি ইমেইল একাউন্ট হিসেবে দেওয়া ছিল। কিন্তু আপনি আর কখনোই সেই ইমেইল আইডির দিকে নজর দেননি। ফলে, আপনার ওই বন্ধুর আইডি কোনোভাবে হ্যাকড হলে আপনার আইডিও সহজেই হ্যাকড হতে পারে। একারণে, সেকেন্ডারি বা রিকভারি ইমেইল হিসেবে কোন আইডি ব্যবহার করছেন, সেই আইডির নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্ত কিনা এসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
৫। ইমেইল বা সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করতে হবে। এর ফলে কেউ আপনার পাসওয়ার্ড জেনে থাকলেও এবং আপনার একাউন্টে লগিন করতে চাইলে আপনার ফোনে এবং/অথবা ইমেইলে একটি কোড আসবে। আপনি সেই কোড প্রবেশ না করালে আইডিতে লগিন করা সম্ভব হবেনা। তবে, এখানেও খেয়াল রাখতে হবে যেন আপনার ব্যবহৃত ফোন নম্বরটি এবং ইমেইল ঠিকানাটির নিরাপত্তা ব্যবস্থাও শক্তিশালী হয়, যেন কোনোভাবে অন্যকেউ সেই কোড জেনে না যায়।
৬। অনেকে অনিরাপদ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে থাকেন। পপআপ উইন্ডো ব্লক করা না থাকলে ব্রাউজারে নতুন উইন্ডো ওপেন হয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইট লোড হতে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব উইন্ডোতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হলেও অনেক সময় ম্যালওয়্যার ডাউনলোড এবং ইন্সটল হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে নিরাপদ হলো ব্রাউজারে এমন একটি প্লাগিন ইন্সটল করে রাখা যেটা এই পপআপ উইন্ডো ব্লক করে রাখবে।
৭। আপনি যদি প্রবেশ করার আগে ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা বিষয়ে সন্দিহান হন, তাহলে ব্রাউজারের ইনকগনিতো বা প্রাইভেট ম্যুড ব্যবহার করুন। কোনো ওয়েবসাইটে ব্যক্তিগত তথ্য প্রবেশ করানোর আগে খেয়াল করুন ব্রাউজারের এড্রেস বারে এর শুরুতে
৮। সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া কোনো এক্সটার্নাল লিংকে ক্লিক করলে যদি আইডি এবং পাসওয়ার্ড চায়, তাহলে দেখে নিন ব্রাউজারের এড্রেস বারে সেই সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইটের ঠিকানা দেখাচ্ছে কিনা। অনেকসময় সামান্য বানান হেরফের করে (যেমনঃ Facebook এর বদলে Facibook, Fasebook etc) একইরকম দেখতে ওয়েবসাইট বানিয়ে আইডি পাসওয়ার্ড চুরির ঘটনা ঘটে।